ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় বেড়িবাঁধ লন্ডভন্ড, জোয়ার ভাটা চলছে

জহিরুল ইসলাম, চকরিয়া :
চকরিয়া এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশী ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের বেড়িবাঁধ। পাহাড়ী ঢলের তোঁড়ে মাতামুহুরী নদীর চকরিয়া অংশের দু’তীরের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। অনেকগুলো ভাঙ্গা দিয়ে এখনও লোকালয়ে জোয়ার ভাটার পানি উঠা নামা চলছে। এতে এ বর্ষা মৌসুমে আমনের চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
এ বছর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে চকরিয়ায় টানা বর্ষনে মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় দু’কুল উপচে ও বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এ বন্যায় পৌরসভা সহ চকরিয়ার ১৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বেশীরভাগ এলাকা থেকে এখন বন্যার পানি নেমে গেছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে; এই বন্যায় সব চেয়ে বেশী ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী বেড়িবাঁধ। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাবিবুর রহমান জানান; কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের ৬৫ নং পোল্ডারের নদীর বাম তীরে উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের করুল্যার কুম এলাকার প্রায় ৩শ’ মিটার, ৬৬/এ-১ নং পোল্ডারের চকরিয়া পৌরসভার আবদুল বারি পাড়ায় বেড়িবাঁধ ব্যাপক ভেঙ্গে গেছে। ফাঁসিয়াখালী এলাকায় অনেক ঘর ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। ওই এলাকায়ও বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। কুরুল্যার কুমের ভাঙ্গা দিয়ে মাতামুহুরী নদী থেকে বন্যার পানি ঢুকে চকরিয়া উপকুলীয় এলাকার বিএমচর, কোনাখালী, পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া ও বদরখালী ইউনিয়নের পুরো এলাকা প্লাবিত হয়। এখনও ওই ভাঙ্গা দিয়ে লোকালয়ে জোয়ার ভাটার পানি উঠা নামা করছে। ওই ইউনিয়ন গুলোর বেশীরভাগ এলাকা এখনও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম শেখ জানান মাতামুহুরী নদীর ডান তীরে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পশ্চিম গোবিন্দপুর, দক্ষিণ গোবিন্দপুর ও বিবিরখিল এলাকায় ব্যাপকভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ওই ভাঙ্গাগুলো দিয়ে পুরো বরইতলী ইউনিয়ন জোয়ার ভাটার কবলে পড়েছে। এ ছাড়া এ নদীর ডান তীরের চকরিয়া উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল ইউনিয়ন সহ আরও কয়েকটি এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। চকরিয়ার বেড়িবাঁধের বেশীর ভাঙ্গা এখনও খোলা। কৃষকরা জানান; একটু বৃষ্টি হলেই মাতামুহুরী নদী দিয়ে পাহাড়ী ঢল নামে। এসব ভাঙ্গাগুলো যদি খোলা থাকে তাহলে আবার বন্যা হবে।
উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ গত দু’দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ শুরু হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানান; সরকারী বরাদ্দের দিকে চেয়ে থাকলে পুরো ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এই এলাকা দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ারও আশংকা আছে। ইতোমধ্যে ওই এলাকার বহু স্থাপনা ঘরবাড়ি নদীতে তলিয়ে গেছে। তাই তিনি নিজেই সেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন বলে জানান। সুরাজপুর-মানিকপুরের চেয়ারম্যান আজিমুল হক জানান; চকরিয়া পেকুয়ার সাংসদ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইলিয়াছ ১০জুলাই বিএমচর ইউনিয়নের কুরুল্যার কুমের বড় ভাঙ্গাটি নিজেই লোক দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। এ সময় কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সাংসদ মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন; প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিয়ে বেড়িবাধের সব ভাঙনগুলো জরুরী ভিত্তিতে পুনঃনির্মাণ করা না হলে এলাকার মানুষ বারবার ক্ষতির শিকার হবে। আমনের চাষাবাদ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে।

পাঠকের মতামত: